বর্তমানে কোরবানির গরুর গোস্ত নিয়ে বিভিন্ন কথা শুনে থাকি সঠিক টা আমারা জেনেনি।



ইসলামে কোরবানির গোস্ত বিতরণ সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কোরবানির গোস্ত তিন ভাগে ভাগ করে বিতরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে:

1.      এক তৃতীয়াংশ গরিব মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করা - অংশটি সমাজের দরিদ্র, অভাবী অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে, যাতে তারাও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

2.      এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজন বন্ধুদের মধ্যে বিতরণ করা - আত্মীয়স্বজন বন্ধুদের মধ্যে বিতরণ করে তাদের সাথে সম্প্রীতি সৌহার্দ্য বাড়ানো হয়।

3.      এক তৃতীয়াংশ নিজের পরিবারের জন্য রাখা - অংশটি নিজের পরিবার পরিবারের সদস্যদের জন্য রাখা হয়, যাতে তারাও কোরবানির গোস্তের অংশ উপভোগ করতে পারে।

এই নিয়ম অনুসরণ করে কোরবানির গোস্ত বিতরণ করলে তা ইসলামী শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা সম্ভব হয়।

 

হাদিসের উদ্ধৃতি:

নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:

"তোমরা খাও, মজুদ করো এবং গরিব-মিসকিনকে দান করো।" (সহিহ মুসলিম)

এই নির্দেশনার মাধ্যমে বোঝা যায় যে কোরবানির গোস্তের সুষম বিতরণ কোরবানির অন্যতম মূল উদ্দেশ্য।

2.

ইসলামে কোরবানির গোস্ত বিতরণে গরিব মিসকিনদের অধিকার অগ্রাধিকার পায়। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু নিয়মকানুন রয়েছে, যা নির্ভর করে স্থানীয় পরিস্থিতি ব্যক্তিগত অবস্থার ওপর। নিম্নে কিছু হাদিস এবং ইসলামী শিক্ষার আলোকে বিষয়ে আলোচনা করা হলো:

হাদিসের আলোকে:

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে:

নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, 'তোমরা তিন দিন পর্যন্ত কোরবানির গোস্ত খেতে পার। এর পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা গরীবদের মাঝে বিতরণ করো।কিন্তু পরবর্তী সময়ে, এক বছর পর, নবী (সা.) নিজে এই বিধান রহিত করে বলেন, ‘তোমরা খাও, মজুদ করো এবং গরিব-মিসকিনকে দান করো।’” (সহিহ মুসলিম)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, কোরবানির গোস্ত সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমে একটি সীমাবদ্ধতা ছিল, যা পরবর্তীতে তুলে নেওয়া হয়। এখন মানুষ কোরবানির গোস্ত খেতে পারে, সংরক্ষণ করতে পারে এবং গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে পারে।

বিশেষ পরিস্থিতিতে মজুদ রাখার অনুমতি:

ইসলামে বিশেষ পরিস্থিতিতে বা বিশেষ চাহিদার ক্ষেত্রে কোরবানির গোস্ত মজুদ রাখার অনুমতি আছে। যদি কেউ এমন অবস্থায় থাকে যেখানে তারা পুরো বছর ধরে গরুর গোস্ত খেতে পায় না, এবং তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তবে তারা গোস্ত নিজেদের জন্য মজুদ রাখতে পারে।

ইমামদের মতামত:

অনেক ফকিহ এবং ইসলামী পণ্ডিতরা বলেন যে, গোস্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে যদি তা তাদের প্রয়োজনের জন্য হয় এবং যদি স্থানীয় পরিস্থিতি বা আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করা হয়।

সারসংক্ষেপ:

ইসলামে কোরবানির গোস্ত সংরক্ষণের অনুমতি আছে যদি:

  • নিজের পরিবারের প্রয়োজন থাকে।
  • স্থানীয় পরিস্থিতি আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়।

তবে, সব অবস্থাতেই গরিব মিসকিনদের অধিকার এবং তাদের মধ্যে গোস্ত বিতরণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দায়িত্ব।

 3.

ইসলামে কোরবানির গোস্ত গরিব মিসকিনদের এবং আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিতরণ করার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। তবে বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে কোরবানির গোস্ত মজুদ করে রাখার অনুমতি পাওয়া যায়। আসুন, এই বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কী বলা হয়েছে তা আরও বিশদভাবে জানি।

হাদিসের আলোকে:

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রথমে কোরবানির গোস্ত তিন দিনের বেশি মজুদ রাখতে নিষেধ করেছিলেন। পরে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল:

"নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, 'তোমরা তিন দিন পর্যন্ত কোরবানির গোস্ত খেতে পার। এর পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা গরীবদের মাঝে বিতরণ করো।কিন্তু পরবর্তী সময়ে, এক বছর পর, নবী (সা.) নিজে এই বিধান রহিত করে বলেন, ‘তোমরা খাও, মজুদ করো এবং গরিব-মিসকিনকে দান করো।’” (সহিহ মুসলিম)

ফকিহদের মতামত:

ইসলামী আইনবিদদের মতে, কোরবানির গোস্ত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম:

  1. এক ভাগ গরিব মিসকিনদের জন্য।
  2. এক ভাগ আত্মীয়স্বজন বন্ধুদের জন্য।
  3. এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য।

বিশেষ পরিস্থিতি:

যদি কেউ এমন পরিস্থিতিতে থাকে যেখানে তারা গোটা বছর ধরে গোস্ত খাওয়ার সুযোগ পায় না এবং তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তবে তারা কোরবানির গোস্ত মজুদ রাখতে পারে। তবে, এটা করা উচিত কেবলমাত্র তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এবং অবশ্যই গরিব মিসকিনদের অংশ দিয়ে।

সারাংশ:

ইসলামে কোরবানির গোস্ত মজুদ করার অনুমতি আছে যদি:

  • ব্যক্তির নিজের বা পরিবারের প্রয়োজন থাকে।
  • স্থানীয় পরিস্থিতি বা আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়।
  • কিন্তু সব অবস্থাতেই গরিব মিসকিনদের অংশ এবং আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা উচিত।

এক্ষেত্রে, গোস্ত পুরোপুরি নিজের জন্য মজুদ না করে, যথাসম্ভব গরিব মিসকিনদের এবং আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা ইসলামের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

 4..

নবী মুহাম্মদ (সা.) এর একটি হাদিসের মাধ্যমে কোরবানির গোশত মজুদ রাখার অনুমতি এবং গরিবদের মধ্যে বিতরণ করার সুপারিশ পাওয়া যায়। এই হাদিসটি নিম্নে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:

হাদিসের মূল বক্তব্য:

হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন:

"আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রথমে কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি রাখার বিষয়ে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এবং বলেন, 'তোমরা খাও, মজুদ করো এবং গরিব-মিসকিনকে দান করো।'” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর 1971)

ব্যাখ্যা:

প্রথমে, নবী মুহাম্মদ (সা.) সাহাবীদের কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করতে নিষেধ করেছিলেন। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিল, সেই সময়ের মদিনার আশেপাশের গরিবদের মধ্যে গোশত দ্রুত বিতরণ করা যাতে তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। পরে, যখন পরিস্থিতি বদলেছিল এবং সেসব এলাকার লোকদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা উন্নত হয়েছিল, তখন নবী (সা.) এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এবং গোশত সংরক্ষণ করার অনুমতি দেন।

ফকিহদের মতামত:

ইসলামী আইনবিদরা (ফকিহ) সাধারণত এই হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কোরবানির গোশত বিতরণের নিয়মাবলী নির্ধারণ করেন:

  1. এক ভাগ গরিব মিসকিনদের জন্য।
  2. এক ভাগ আত্মীয়স্বজন বন্ধুদের জন্য।
  3. এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য।

সারসংক্ষেপ:

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, কোরবানির গোশত মজুদ করা ইসলামে অনুমোদিত, তবে তা এমনভাবে করা উচিত যাতে গরিব মিসকিনদের অধিকার সংরক্ষিত হয় এবং তারা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।

তাহলে, বিশেষ পরিস্থিতিতে, যদি কারো আর্থিক অবস্থা খারাপ হয় এবং তারা গোটা বছর গোশত খাওয়ার সুযোগ না পায়, তাহলে তারা নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য কোরবানির গোশত মজুদ রাখতে পারে। তবে, গরিব মিসকিনদের অধিকার অগ্রাধিকার দেয়ার পরে।

 

 

 

 

 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.